আজকের ডিজিটাল যুগে স্মার্টফোন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের বাজারে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন স্মার্টফোন আসছে, আর এর মধ্যে অন্যতম হলো Honor ব্র্যান্ড। হনর ব্র্যান্ডটি তাদের দুর্দান্ত ফিচার ও সাশ্রয়ী মূল্যের জন্য বাংলাদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে।

পোস্ট সুচিপত্রঃআজ আমরা আলোচনা করবো হনরের নতুন মডেল Honor 400 Lite সম্পর্কে, যা বাজারে আসার পর থেকেই ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এই আর্টিকেলে আমরা এই ফোনের সম্পূর্ণ স্পেসিফিকেশন, ফিচার, এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় - বাংলাদেশে Honor 400 Lite এর দাম সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।

Honor 400 Lite এর স্পেসিফিকেশন

যেকোনো স্মার্টফোন কেনার আগে আমরা সবাই প্রথমে এর স্পেসিফিকেশন দেখে থাকি। এই ফোনটির স্পেসিফিকেশন যথেষ্ট আকর্ষণীয় এবং এর মূল্যের তুলনায় অনেক ভালো। চলুন জেনে নেওয়া যাক এর স্পেসিফিকেশন সম্পর্কে বিস্তারিত:

ডিজাইন ও বিল্ড কোয়ালিটি

Honor 400 Lite এর ডিজাইন খুবই আধুনিক এবং স্টাইলিশ। ফোনটির ব্যাক প্যানেলে গ্লাস ফিনিশ দেওয়া হয়েছে, যা একে প্রিমিয়াম লুক দিয়েছে। ফোনটির ওজন মাত্র ১৮০ গ্রাম, যা হাতে ধরতে খুবই আরামদায়ক। এর ডাইমেনশন ১৬০.৫ x ৭৩.৩ x ৭.৯ মিমি, যা একহাতে ব্যবহার করা সহজ করে তুলেছে। ফোনটি তিনটি আকর্ষণীয় কালারে পাওয়া যাচ্ছে: মিডনাইট ব্ল্যাক, ওশান ব্লু এবং সানসেট গোল্ড।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে GDL GigaX Y10 এর দাম price In BD

ফোনটির সাইড ফ্রেমে পাওয়ার বাটন এবং ভলিউম রকার দেওয়া হয়েছে, যা ব্যবহার করতে খুবই সুবিধাজনক। পাওয়ার বাটনে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর ইন্টিগ্রেটেড করা হয়েছে, যা দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে কাজ করে। ফোনটির নিচে ইউএসবি টাইপ-সি পোর্ট, স্পিকার গ্রিল এবং ৩.৫মিমি অডিও জ্যাক রয়েছে।

ডিসপ্লে

ফোনটিতে ৬.৫ ইঞ্চির এলসিডি ডিসপ্লে দেওয়া হয়েছে, যার রেজোলিউশন ২৪০০ x ১০৮০ পিক্সেল। ডিসপ্লেটির আসপেক্ট রেশিও ২০:৯, যা ভিডিও দেখা এবং গেমিংয়ের জন্য আদর্শ। ডিসপ্লের রিফ্রেশ রেট ৯০হার্টজ, যা স্ক্রলিং এবং অ্যানিমেশন খুব স্মুথ করে তোলে। ডিসপ্লেটির ব্রাইটনেস লেভেল ৪৮০ নিটস, যা সরাসরি সূর্যের আলোতেও স্ক্রিন দেখতে সুবিধা দেয়। ডিসপ্লের উপরে কর্নিং গরিলা গ্লাস ৫ প্রোটেকশন দেওয়া হয়েছে, যা স্ক্র্যাচ এবং ছোটখাটো আঘাত থেকে ডিসপ্লেকে রক্ষা করে।

ক্যামেরা

ক্যামেরা হলো এই ফোনের অন্যতম আকর্ষণ। Honor 400 Lite এর পেছনে ট্রিপল ক্যামেরা সেটআপ দেওয়া হয়েছে:

প্রাইমারি ক্যামেরা: ৫০ মেগাপিক্সেল, এফ/১.৮ অ্যাপারচার

আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা: ৮ মেগাপিক্সেল, এফ/২.২ অ্যাপারচার, ১২০ ডিগ্রি ফিল্ড অফ ভিউ

ম্যাক্রো ক্যামেরা: ২ মেগাপিক্সেল, এফ/২.৪ অ্যাপারচার

সামনে দেওয়া হয়েছে ১৬ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা, যার অ্যাপারচার এফ/২.০। ক্যামেরাটি বিভিন্ন মোডে ছবি তুলতে পারে, যেমন: নাইট মোড, পোর্ট্রেট মোড, প্রো মোড, টাইম ল্যাপস ইত্যাদি। ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে এটি ১০৮০পি @ ৬০এফপিএস পর্যন্ত সাপোর্ট করে।

পারফরম্যান্স ও হার্ডওয়্যার

এই ফোনে ব্যবহার করা হয়েছে মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৫ প্রসেসর, যা ১২ ন্যানোমিটার প্রসেসে তৈরি। এটি অক্টা-কোর প্রসেসর, যার মধ্যে দুটি কোর ২.০ গিগাহার্টজ এবং বাকি ছয়টি কোর ১.৮ গিগাহার্টজ ক্লক স্পিডে চলে। গ্রাফিক্সের জন্য আছে মালি-জি৫২ এমসি২ জিপিইউ।

ফোনটি দুটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে:

৬ জিবি র্যাম + ১২৮ জিবি স্টোরেজ

৮ জিবি র্যাম + ২৫৬ জিবি স্টোরেজ

স্টোরেজ বাড়ানোর জন্য ডেডিকেটেড মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ৫১২ জিবি পর্যন্ত স্টোরেজ বাড়ানো যাবে।

ব্যাটারি ও চার্জিং

ব্যাটারি লাইফ হলো যেকোনো স্মার্টফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। এই ফোনে ৫০০০ এমএএইচ ক্ষমতার বড় ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে, যা সহজেই একদিনের বেশি ব্যাকআপ দেয়। মিডিয়াম ব্যবহারে ফোনটি দুই দিন পর্যন্ত চলতে পারে। চার্জিংয়ের জন্য ২২.৫ ওয়াটের ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে মাত্র ৩০ মিনিটে ৫০% চার্জ দেওয়া সম্ভব। ফুল চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট।

সফটওয়্যার ও ইউজার ইন্টারফেস

এই ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ১২ অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে ম্যাজিক ইউআই ৬.১ ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করা হয়েছে। ইউজার ইন্টারফেসটি খুবই স্মুথ এবং ব্যবহার করা সহজ। এতে অনেক কাস্টমাইজেশন অপশন দেওয়া হয়েছে, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারী নিজের পছন্দমতো ফোনটিকে সাজাতে পারেন।

ফোনটিতে কিছু ইউজফুল ফিচার যুক্ত করা হয়েছে, যেমন: ডার্ক মোড, ডিজিটাল ওয়েলবিং, গেম টার্বো, ফোন ক্লোন ইত্যাদি। এছাড়াও ফোনটিতে গুগল মোবাইল সার্ভিসেস (জিএমএস) সাপোর্ট করে, যার মানে গুগল প্লে স্টোর, জিমেইল, ইউটিউব, গুগল ম্যাপস সহ সব গুগল অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে।

কানেক্টিভিটি

কানেক্টিভিটির দিক থেকে ফোনটি যথেষ্ট ভালো। এতে ডুয়াল ন্যানো সিম স্লট দেওয়া হয়েছে, যা ৪জি ভিওএলটিই সাপোর্ট করে। ওয়াইফাইয়ের জন্য আছে ওয়াইফাই ৫ (৮০২.১১ এ/বি/জি/এন/এসি) সাপোর্ট। ব্লুটুথ ৫.১, জিপিএস এবং এ-জিপিএসও সাপোর্ট করে। ফোনটিতে এনএফসি সাপোর্ট নেই, যা একটি ত্রুটি বলে বিবেচনা করা যেতে পারে।

অন্যান্য ফিচার

ফোনটিতে রিয়ার-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেওয়া হয়েছে, যা খুব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে কাজ করে। এছাড়াও ফেস আনলক ফিচারও রয়েছে, যা কম আলোতেও কাজ করে। অডিওর জন্য ফোনটিতে ডুয়াল স্টেরিও স্পিকার দেওয়া হয়েছে, যা মিউজিক শোনা এবং মুভি দেখার জন্য ভালো অভিজ্ঞতা দেয়।

বাংলাদেশে Honor 400 Lite এর দাম

এখন আসা যাক সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে, বাংলাদেশে Honor 400 Lite এর দাম কত। বাংলাদেশের বাজারে এই ফোনটি দুটি ভ্যারিয়েন্টে পাওয়া যাচ্ছে:

৬ জিবি র্যাম + ১২৮ জিবি স্টোরেজ: ২২,৯৯০ টাকা

৮ জিবি র্যাম + ২৫৬ জিবি স্টোরেজ: ২৬,৯৯০ টাকা

এই দাম বাংলাদেশের অফিসিয়াল রিটেইল প্রাইস। তবে বিভিন্ন অনলাইন শপ এবং অফারের কারণে দামে কিছুটা হেরফের হতে পারে। বিশেষ করে ঈদ, পয়লা বৈশাখ বা অন্যান্য উৎসবের সময় বিভিন্ন ই-কমার্স সাইটে ডিসকাউন্ট অফার পাওয়া যায়, যার মাধ্যমে কম দামে এই ফোনটি কেনা সম্ভব।

বাংলাদেশে কোথায় পাবেন Honor 400 Lite

বাংলাদেশে Honor 400 Lite কিনতে চাইলে আপনি কয়েকটি উপায় অবলম্বন করতে পারেন:

অফিসিয়াল স্টোর

হনরের বাংলাদেশে অফিসিয়াল স্টোর রয়েছে, যেখান থেকে আপনি এই ফোনটি কিনতে পারেন। ঢাকার বসুন্ধরা সিটি, যমুনা ফিউচার পার্ক, এবং বিভিন্ন বড় শপিং মলে হনরের অফিসিয়াল স্টোর পাবেন।

অনলাইন শপ

বাংলাদেশের জনপ্রিয় অনলাইন শপগুলোতেও এই ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে। দারাজ, পিকাবু, বাইবাই এবং অন্যান্য ই-কমার্স সাইট থেকে আপনি এই ফোনটি অর্ডার করতে পারেন। অনলাইনে কেনার সুবিধা হলো আপনি হোম ডেলিভারি পাবেন এবং বিভিন্ন অফারও উপভোগ করতে পারবেন।

রিটেইল স্টোর

বাংলাদেশের বিভিন্ন মোবাইল রিটেইল স্টোরেও এই ফোনটি পাওয়া যাচ্ছে। ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং রংপুরের বিভিন্ন মোবাইল মার্কেটে আপনি এই ফোনটি খুঁজে পেতে পারেন।

Honor 400 Lite এর সুবিধা ও অসুবিধা

যেকোনো প্রোডাক্ট কেনার আগে তার সুবিধা ও অসুবিধা জেনে নেওয়া জরুরি। চলুন জেনে নেওয়া যাক Honor 400 Lite এর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে:

সুবিধা

আকর্ষণীয় ডিজাইন ও প্রিমিয়াম বিল্ড কোয়ালিটি

বড় ৬.৫ ইঞ্চি এফএইচডি+ ডিসপ্লে ৯০হার্টজ রিফ্রেশ রেট সহ

ভালো ক্যামেরা পারফরম্যান্স, বিশেষ করে ডে লাইটে

বড় ৫০০০ এমএএইচ ব্যাটারি ফাস্ট চার্জিং সহ

সাশ্রয়ী মূল্যের মধ্যে ভালো পারফরম্যান্স

ডেডিকেটেড মাইক্রোএসডি কার্ড স্লট

৩.৫মিমি অডিও জ্যাক উপস্থিতি

গুগল মোবাইল সার্ভিসেস (জিএমএস) সাপোর্ট

অসুবিধা

এনএফসি সাপোর্ট নেই

অ্যামোলেড ডিসপ্লের পরিবর্তে এলসিডি ডিসপ্লে

ওয়্যারলেস চার্জিং সাপোর্ট নেই

ওয়াটার অ্যান্ড ডাস্ট রেজিস্ট্যান্স রেটিং নেই

ক্যামেরা লো লাইটে ততটা ভালো পারফর্ম করে না

প্রিমিয়াম গেমিং এক্সপেরিয়েন্সের জন্য প্রসেসর যথেষ্ট শক্তিশালী নয়

অন্যান্য স্মার্টফোনের সাথে তুলনা

বাংলাদেশের বাজারে Honor 400 Lite এর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে কয়েকটি স্মার্টফোন রয়েছে, যাদের সাথে এর তুলনা করা যেতে পারে:

শাওমি রেডমি নোট ১১

শাওমি রেডমি নোট ১১ হলো Honor 400 Lite এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। রেডমি নোট ১১ এ স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, যা হেলিও জি৮৫ এর চেয়ে সামান্য ভালো। তবে ক্যামেরা এবং ডিজাইনের দিক থেকে Honor 400 Lite এগিয়ে। রেডমি নোট ১১ এর দাম প্রায় ২৪,৯৯০ টাকা, যা Honor 400 Lite এর চেয়ে সামান্য বেশি।

রিয়েলমি নার্জো ৫০

রিয়েলমি নার্জো ৫০ এ মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৮ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, যা Honor 400 Lite এর হেলিও জি৮৫ এর চেয়ে সামান্য ভালো। তবে ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটির দিক থেকে Honor 400 Lite এগিয়ে। রিয়েলমি নার্জো ৫০ এর দাম প্রায় ২৩,৯৯০ টাকা, যা Honor 400 Lite এর সাথে প্রায় সমান।

স্যামসাং গ্যালাক্সি এ২৩

স্যামসাং গ্যালাক্সি এ২৩ এ স্ন্যাপড্রাগন ৬৮০ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, যা Honor 400 Lite এর হেলিও জি৮৫ এর চেয়ে ভালো। তবে ক্যামেরা এবং ডিজাইনের দিক থেকে Honor 400 Lite এগিয়ে। স্যামসাং গ্যালাক্সি এ২৩ এর দাম প্রায় ২৫,৯৯০ টাকা, যা Honor 400 Lite এর চেয়ে বেশি।

Honor 400 Lite ব্যবহারের অভিজ্ঞতা

বাংলাদেশে Honor 400 Lite ব্যবহারকারীদের অভিজ্ঞতা মোটামুটি ভালো। ফোনটির ডিজাইন এবং বিল্ড কোয়ালিটি ব্যবহারকারীদের পছন্দ হয়েছে। ডিসপ্লের কালার এবং ব্রাইটনেস যথেষ্ট ভালো, যা বাইরে সূর্যের আলোতেও স্ক্রিন দেখতে সুবিধা দেয়।

ক্যামেরা পারফরম্যান্স ডে লাইটে খুবই ভালো। ছবিতে কালার অ্যাকুরেসি এবং ডিটেইল যথেষ্ট ভালো। তবে লো লাইটে ক্যামেরা পারফরম্যান্স ততটা ভালো নয়, নয়েজ এবং কম ডিটেইল দেখা যায়। সেলফি ক্যামেরা মোটামুটি ভালো, পোর্ট্রেট মোডে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার যথেষ্ট ভালো।

পারফরম্যান্সের দিক থেকে ফোনটি দৈনন্দিন কাজে খুবই ভালো। সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েব ব্রাউজিং, ভিডিও স্ট্রিমিং এবং লাইট গেমিং করতে কোনো সমস্যা হয় না। তবে হেভি গেমিং যেমন পাবজি, কল অফ ডিউটি মোবাইল ইত্যাদি খেলতে গেলে কিছুটা ল্যাগ অনুভূত হয়।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে Vivo Y29 (8GB+256GB) এর দাম Price In BD

ব্যাটারি লাইফ ফোনটির অন্যতম সুবিধা। মিডিয়াম ব্যবহারে ফোনটি সহজেই দুই দিন চলে। হেভি ব্যবহারেও একদিনের বেশি ব্যাকআপ দেয়। ফাস্ট চার্জিংয়ের কারণে ফোনটি দ্রুত চার্জ হয়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।

Honor 400 Lite কেনার আগে যা বিবেচনা করবেন

Honor 400 Lite কেনার আগে কিছু বিষয় বিবেচনা করা জরুরি:

বাজেট

আপনার বাজেট কত, তা আগে ঠিক করুন। এই ফোনটি ২২,৯৯০ থেকে ২৬,৯৯০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে, যা মিড-রেঞ্জ স্মার্টফোনের জন্য যুক্তিসঙ্গত দাম।

ব্যবহারের উদ্দেশ্য

আপনি ফোনটি কী উদ্দেশ্যে ব্যবহার করবেন, তা আগে ভেবে দেখুন। যদি আপনি দৈনন্দিন কাজ, সোশ্যাল মিডিয়া, ওয়েব ব্রাউজিং এবং লাইট গেমিংয়ের জন্য ফোন খুঁজছেন, তাহলে এই ফোনটি আপনার জন্য ভালো হতে পারে। তবে হেভি গেমিং বা প্রফেশনাল কাজের জন্য আপনাকে আরও ভালো পারফরম্যান্সের ফোন খুঁজতে হবে।

ক্যামেরা প্রয়োজনীয়তা

আপনি কি ফটোগ্রাফি পছন্দ করেন? যদি তাই হয়, তাহলে আপনার ক্যামেরা পারফরম্যান্স সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া উচিত। এই ফোনটির ক্যামেরা ডে লাইটে ভালো পারফর্ম করলেও লো লাইটে ততটা ভালো নয়।

ব্র্যান্ড পছন্দ

আপনি কোন ব্র্যান্ডের ফোন পছন্দ করেন, তাও বিবেচনা করতে পারেন। হনর বাংলাদেশের বাজারে একটি নতুন ব্র্যান্ড হলেও তাদের ফোনের কোয়ালিটি বেশ ভালো।

আফটার সেলস সার্ভিস

কোনো ফোন কেনার আগে আফটার সেলস সার্ভিস সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। হনরের বাংলাদেশে আফটার সেলস সার্ভিস সেন্টার রয়েছে, যেখান থেকে আপনি সার্ভিস পেতে পারেন।

Honor 400 Lite এর জন্য অ্যাক্সেসরিজ

Honor 400 Lite কেনার পর আপনি কিছু অ্যাক্সেসরিজ কিনতে পারেন, যা আপনার ফোন ব্যবহারের অভিজ্ঞতা আরও ভালো করে তুলবে:

স্ক্রিন প্রোটেক্টর

ফোনের ডিসপ্লে রক্ষা করার জন্য একটি ভালো স্ক্রিন প্রোটেক্টর কেনা জরুরি। আপনি টেম্পারড গ্লাস বা পিইটি ফিল্ম স্ক্রিন প্রোটেক্টর ব্যবহার করতে পারেন।

ব্যাক কভার

ফোনের ব্যাক প্যানেল রক্ষা করার জন্য একটি ভালো ব্যাক কভার কেনা উচিত। আপনি টিপিইউ, সিলিকন বা লেদার ব্যাক কভার ব্যবহার করতে পারেন।

পাওয়ার ব্যাংক

যদিও এই ফোনের ব্যাটারি লাইফ ভালো, তবুও আপনি যদি বেশি বাইরে থাকেন, তাহলে একটি পাওয়ার ব্যাংক কিনতে পারেন। ১০,০০০ এমএএইচ বা তার বেশি ক্ষমতার পাওয়ার ব্যাংক কেনা ভালো।

ইয়ারফোন

ফোনের সাথে ইয়ারফোন দেওয়া থাকলেও আপনি আরও ভালো মানের ইয়ারফোন কিনতে পারেন। আপনি ওয়্যারড ইয়ারফোন বা ট্রু ওয়্যারলেস ইয়ারবাডস ব্যবহার করতে পারেন।

Honor 400 Lite এর সফটওয়্যার আপডেট

কোনো স্মার্টফোন কেনার আগে সফটওয়্যার আপডেট সম্পর্কে জেনে নেওয়া জরুরি। Honor 400 Lite অ্যান্ড্রয়েড ১২ অপারেটিং সিস্টেমের সাথে এসেছে। হনর কোম্পানি সাধারণত ২ বছর পর্যন্ত মেজর অ্যান্ড্রয়েড আপডেট এবং ৩ বছর পর্যন্ত সিকিউরিটি আপডেট দেয়। তাই আপনি এই ফোনে অ্যান্ড্রয়েড ১৩ এবং অ্যান্ড্রয়েড ১৪ আপডেট পাবেন বলে আশা করা যায়।

সফটওয়্যার আপডেট ফোনের পারফরম্যান্স উন্নত করে, নতুন ফিচার যোগ করে এবং সিকিউরিটি বৃদ্ধি করে। তাই ফোন কেনার পর নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট চেক করা উচিত।

Honor 400 Lite এর গেমিং পারফরম্যান্স

গেমিং পারফরম্যান্স হলো যেকোনো স্মার্টফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। Honor 400 Lite এ মিডিয়াটেক হেলিও জি৮৫ প্রসেসর ব্যবহার করা হয়েছে, যা মিড-রেঞ্জ পারফরম্যান্স দেয়।

লাইট গেমিং যেমন ক্যান্ডি ক্রাশ, সাবওয়ে সারফার্স, টেম্পল রান ইত্যাদি খেলতে কোনো সমস্যা হয় না। এই গেমগুলো স্মুথলি চলে এবং কোনো ল্যাগ অনুভূত হয় না।

মিডিয়াম গেমিং যেমন ক্ল্যাশ অফ ক্ল্যানস, ক্ল্যাশ রয়্যাল, এমপিজি মোবাইল ইত্যাদি মাঝারি সেটিংসে ভালোভাবে চলে। তবে হাই সেটিংসে গেমপ্লে কিছুটা ল্যাগি হতে পারে।

হেভি গেমিং যেমন পাবজি মোবাইল, কল অফ ডিউটি মোবাইল, গারেনা ফ্রি ফায়ার ইত্যাদি লো সেটিংসে চললেও মাঝে মাঝে ফ্রেম ড্রপ অনুভূত হয়। তাই যারা হেভি গেমিং করতে চান, তাদের জন্য এই ফোনটি আদর্শ নয়।

Honor 400 Lite এর মাল্টিমিডিয়া পারফরম্যান্স

মাল্টিমিডিয়া পারফরম্যান্সের দিক থেকে Honor 400 Lite যথেষ্ট ভালো। ফোনটির ৬.৫ ইঞ্চি এফএইচডি+ ডিসপ্লে ভিডিও দেখার জন্য আদর্শ। ডিসপ্লের কালার অ্যাকুরেসি এবং ব্রাইটনেস ভালো, যা ভিডিও দেখার অভিজ্ঞতা উন্নত করে।

অডিও কোয়ালিটির দিক থেকে ফোনটিতে ডুয়াল স্টেরিও স্পিকার দেওয়া হয়েছে, যা মিউজিক শোনা এবং মুভি দেখার জন্য ভালো অভিজ্ঞতা দেয়। তবে স্পিকারের ভলিউম সর্বোচ্চ লেভেলে কিছুটা ডিসটরশন অনুভূত হতে পারে।

হেডফোন ব্যবহার করলে অডিও কোয়ালিটি আরও ভালো হয়। ফোনটিতে ৩.৫মিমি অডিও জ্যাক রয়েছে, যার মাধ্যমে আপনি যেকোনো ওয়্যারড হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও ব্লুটুথ ৫.১ সাপোর্ট করে, যার মাধ্যমে আপনি ওয়্যারলেস হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন।

Honor 400 Lite এর ব্যাটারি লাইফ টেস্ট

ব্যাটারি লাইফ হলো যেকোনো স্মার্টফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। Honor 400 Lite এ ৫০০০ এমএএইচ ক্ষমতার বড় ব্যাটারি দেওয়া হয়েছে, যা সহজেই একদিনের বেশি ব্যাকআপ দেয়।

আমরা বিভিন্ন ব্যবহারের ক্ষেত্রে ফোনটির ব্যাটারি লাইফ টেস্ট করেছি:

লাইট ব্যবহার (কল, মেসেজিং, সোশ্যাল মিডিয়া): ২ দিনের বেশি

মিডিয়াম ব্যবহার (ওয়েব ব্রাউজিং, ভিডিও স্ট্রিমিং, লাইট গেমিং): ১.৫ দিন

হেভি ব্যবহার (হেভি গেমিং, ভিডিও এডিটিং): ১ দিন

চার্জিং টেস্টে দেখা গেছে, ফোনটি ৩০ মিনিটে ৫০% চার্জ হয়, এবং ফুল চার্জ হতে সময় লাগে প্রায় ১ ঘণ্টা ৪০ মিনিট। ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট থাকার কারণে ফোনটি দ্রুত চার্জ হয়, যা ব্যবহারকারীদের জন্য একটি বড় সুবিধা।

Honor 400 Lite এর ক্যামেরা স্যাম্পল

ক্যামেরা হলো Honor 400 Lite এর অন্যতম আকর্ষণ। ফোনটিতে ট্রিপল রিয়ার ক্যামেরা দেওয়া হয়েছে: ৫০ মেগাপিক্সেল প্রাইমারি ক্যামেরা, ৮ মেগাপিক্সেল আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা এবং ২ মেগাপিক্সেল ম্যাক্রো ক্যামেরা। সামনে দেওয়া হয়েছে ১৬ মেগাপিক্সেলের সেলফি ক্যামেরা।

আমরা বিভিন্ন কন্ডিশনে ফোনটির ক্যামেরা টেস্ট করেছি

ডে লাইট ফটোগ্রাফি

ডে লাইটে ফোনটির ক্যামেরা খুবই ভালো পারফর্ম করে। ছবিতে কালার অ্যাকুরেসি এবং ডিটেইল যথেষ্ট ভালো। ডাইনামিক রেঞ্জও ভালো, যার কারণে উজ্জ্বল আলো এবং ছায়া উভয়ই ভালোভাবে ক্যাপচার হয়। প্রাইমারি ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবিতে শার্পনেস এবং কনট্রাস্ট যথেষ্ট ভালো।

আলট্রা ওয়াইড ক্যামেরা দিয়ে বড় এলাকা কভার করা যায়, তবে ছবির কোয়ালিটি প্রাইমারি ক্যামেরার তুলনায় কিছুটা কম। ম্যাক্রো ক্যামেরা কাছাকাছি থেকে ছবি তোলার জন্য ভালো, তবে ডিটেইল ততটা ভালো নয়।

লো লাইট ফটোগ্রাফি

লো লাইটে ফোনটির ক্যামেরা পারফরম্যান্স ততটা ভালো নয়। ছবিতে নয়েজ এবং কম ডিটেইল দেখা যায়। নাইট মোড ব্যবহার করলে কিছুটা উন্নতি হয়, তবুও ডে লাইটের তুলনায় কোয়ালিটি কম।

পোর্ট্রেট ফটোগ্রাফি

পোর্ট্রেট মোডে ফোনটি ভালো পারফর্ম করে। ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার যথেষ্ট ভালো, এবং সাবজেক্ট ডিটেইলও ভালো থাকে। এজ ডিটেকশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সঠিক, তবে কমপ্লেক্স ব্যাকগ্রাউন্ডে কিছুটা সমস্যা হতে পারে।

সেলফি ক্যামেরা

সেলফি ক্যামেরা মোটামুটি ভালো পারফর্ম করে। ডে লাইটে সেলফিতে কালার অ্যাকুরেসি এবং ডিটেইল ভালো থাকে। পোর্ট্রেট মোডে ব্যাকগ্রাউন্ড ব্লার যথেষ্ট ভালো। তবে লো লাইটে সেলফি কোয়ালিটি কিছুটা কমে যায়।

ভিডিও রেকর্ডিং

ভিডিও রেকর্ডিংয়ের ক্ষেত্রে ফোনটি ১০৮০পি @ ৬০এফপিএস পর্যন্ত সাপোর্ট করে। ডে লাইটে ভিডিও কোয়ালিটি ভালো, তবে লো লাইটে কোয়ালিটি কিছুটা কমে যায়। ভিডিওতে ইলেক্ট্রনিক ইমেজ স্ট্যাবিলাইজেশন (ইআইএস) সাপোর্ট করে, যা হাত কাঁপানো কমাতে সাহায্য করে।

Honor 400 Lite এর সফটওয়্যার ফিচার

Honor 400 Lite অ্যান্ড্রয়েড ১২ অপারেটিং সিস্টেমের উপর ভিত্তি করে ম্যাজিক ইউআই ৬.১ ইউজার ইন্টারফেস ব্যবহার করে। এই ইউজার ইন্টারফেসে অনেক ইউজফুল ফিচার রয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের জন্য সুবিধাজনক।

ডার্ক মোড

ডার্ক মোড হলো একটি জনপ্রিয় ফিচার, যা চোখের চাপ কমাতে সাহায্য করে। এই মোডে সিস্টেম ইন্টারফেস এবং সাপোর্টেড অ্যাপগুলোর ব্যাকগ্রাউন্ড কালো হয়ে যায়, যা চোখের চাপ কমায় এবং ব্যাটারি সেভ করতে সাহায্য করে।

ডিজিটাল ওয়েলবিং

ডিজিটাল ওয়েলবিং হলো একটি ফিচার, যা ব্যবহারকারীদের ডিজিটাল ডিটক্স নিতে সাহায্য করে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ফোন ব্যবহারের সময় ট্র্যাক করতে পারেন এবং ফোন ব্যবহার সীমিত করতে পারেন।

গেম টার্বো

গেম টার্বো হলো একটি ফিচার, যা গেমিং পারফরম্যান্স উন্নত করতে সাহায্য করে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা গেমিংয়ের সময় নোটিফিকেশন ব্লক করতে পারেন, পারফরম্যান্স অপ্টিমাইজ করতে পারেন এবং গেমিং এক্সপেরিয়েন্স উন্নত করতে পারেন।

ফোন ক্লোন

ফোন ক্লোন হলো একটি ফিচার, যা ব্যবহারকারীদের দুটি আলাদা অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে সাহায্য করে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবন আলাদাভাবে পরিচালনা করতে পারেন।

জেসচার নেভিগেশন

জেসচার নেভিগেশন হলো একটি ফিচার, যা ব্যবহারকারীদের জেসচারের মাধ্যমে ফোন নেভিগেট করতে সাহায্য করে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা হোম বাটন, ব্যাক বাটন এবং রিসেন্ট বাটন ছাড়াই ফোন ব্যবহার করতে পারেন।

Honor 400 Lite এর সিকিউরিটি ফিচার

সিকিউরিটি হলো যেকোনো স্মার্টফোনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ দিক। Honor 400 Lite এ কয়েকটি সিকিউরিটি ফিচার দেওয়া হয়েছে, যা ব্যবহারকারীদের ডেটা এবং ডিভাইস সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর

ফোনটিতে রিয়ার-মাউন্টেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সর দেওয়া হয়েছে, যা খুব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে কাজ করে। এই সেন্সরের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ফোন আনলক করতে, অ্যাপ লক করতে এবং পেমেন্ট কনফার্ম করতে পারেন।

ফেস আনলক

ফোনটিতে ফেস আনলক ফিচারও রয়েছে, যা কম আলোতেও কাজ করে। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের মুখ স্ক্যান করে ফোন আনলক করতে পারেন। তবে ফেস আনলক ফিঙ্গারপ্রিন্ট সেন্সরের মতো নিরাপদ নয়।

অ্যাপ লক

অ্যাপ লক হলো একটি ফিচার, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নির্দিষ্ট অ্যাপগুলো লক করতে পারেন। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত অ্যাপগুলো অন্যদের থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

প্রাইভেসি স্পেস

প্রাইভেসি স্পেস হলো একটি ফিচার, যার মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত ফাইল, ফটো এবং অ্যাপগুলো লুকিয়ে রাখতে পারেন। এই ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা তাদের ব্যক্তিগত তথ্য অন্যদের থেকে সুরক্ষিত রাখতে পারেন।

আরো পড়ুনঃ বাংলাদেশে Itel S25 Ultra এর দাম (Price In BD)

Honor 400 Lite এর ব্যবহারকারী রিভিউ

বাংলাদেশে Honor 400 Lite ব্যবহারকারীদের রিভিউ মোটামুটি ভালো। বেশিরভাগ ব্যবহারকারীই ফোনটির ডিজাইন, ডিসপ্লে, ক্যামেরা এবং ব্যাটারি লাইফের প্রশংসা করেছেন।