বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি কীভাবে খেতে হয়?
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি এমন একটি জনপ্রিয় উপাদান, যা বহু যুগ ধরে নারীদের বুকের দুধ বাড়াতে সাহায্য করার জন্য ব্যবহার করা হয়ে আসছে। মেথি (Fenugreek) একটি মসলা যা পুরনোকাল থেকেই ঔষধি গুণের কারণে সমাদৃত।
পোস্ট সুচিপত্রঃআজকের এ প্রবন্ধে আমি বিস্তারিতভাবে বলব বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি কীভাবে খেতে হয়, এর উপকারিতা, দুশ্ফল, খাদ্যনিয়ম, নিরাপত্তা এবং যে বিষয়গুলো অনুসরণ করলে আপনি সর্বোচ্চ ফল পাবেন। আপনারা যারা গর্ভবতী বা স্তনপান করাচ্ছেন অথবা পরিকল্পনামূলকভাবে বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে চান, তাদের জন্য এই তথ্য সম্পূর্ণভাবে উপযোগী হবে।
ভুমিকাঃ
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি একটি প্রচলিত ও কার্যকর উপায়। মেথি, ইংরেজিতে Fenugreek, একটি প্রাচীন গাছ যা দানাদার বীজগুলোর জন্য বিশেষভাবে চর্চিত। বাংলাদেশের গ্রাম‑ শহর উভয়ত্রেই মহিলারা মেথি বীজ, মেথি পাতার ব্যবহার করেন মাতৃত্বকালীন পায়খানা ও দুধ উৎপাদন বাড়ানোর জন্য।
বৈজ্ঞানিক গবেষণায় দেখা গেছে যে মেথি তে রয়েছে ফাইটোস্ট্রোজেনস, যেসব উপাদান শেলে স্তন গঠনের হরমোনগুলোর কার্যক্রমকে সহায়তা করতে পারে। বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি এর ফলমূল, বীজ ও পাতা বিভিন্নভাবে খাওয়া যেতে পারে, যা মায়ের দুধের পরিমাণ বাড়াতে সহায়ক। তবে একারনে নির্ধারিত মাত্রায় গ্রহণ ও সঠিক প্রস্তুতির পদ্ধতি জানা খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ অতিরিক্ত ব্যবহার অথবা ভুলভাবে খাওয়া হলে পেটে গ্যাস, বমিসহ অস্বস্তি হতে পারে। এই প্রবন্ধে আমরা বিস্তারিতভাবে জানব যে মেথি কেন কার্যকর, কিভাবে খাওয়া উচিত, কী পরিমাণ নেয়া যায়, প্রস্তুতির পদ্ধতি ও কিছু সতর্কতা যা মায়েদের অবশ্যই জানতে হবে।
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি সম্পর্কে জানুন
মেথি (Fenugreek) এক ধরনের ঔষধি গাছ যার বীজ ও পাতা দুটোই ভেষজ গুণে ভরপুর। এটি মূলত রান্নার মসলা হিসেবে ব্যবহৃত হলেও, আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসায় বহু যুগ ধরে এটি ব্যবহার হয়ে আসছে হরমোন ভারসাম্য রক্ষা, হজম শক্তি বাড়ানো, এবং বিশেষ করে মায়েদের বুকের দুধ বৃদ্ধি করতে।
মেথির পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
মেথি একটি পুষ্টিসমৃদ্ধ বীজ যা প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাস এমনকি কিছুটা ক্যারোটিনয়েডস ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি বীজে প্রচুর ল্যাকটোগগ (lactagogue) বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা দুধ উৎপাদন বাড়িয়ে দিতে পারে। ফাইটোঅ্যাস্ট্রোজেন বা উদ্ভিদ ভিটামিন‐ভিত্তিক হরমোন অনুকূলভাবে শরীরের প্রাকৃতিক হরমোনগুলোর কর্মকাণ্ডকে উত্সাহিত করে, বিশেষ করে প্রোল্যাকটিন ও অক্সিটোসিন যা দুধ তৈরি ও ছড়িয়ে দেয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
এছাড়া মেথির মধ্যে রয়েছে গ্লাইকো‐কম্পাউন্ড যা রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে, যা মাতৃস্বাস্থ্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। পুষ্টির ঘাটতি যেমন আয়রন অথবা ভিটামিনের অভাব থাকলে দুধ উৎপাদনে প্রভাব পড়ে, এবং মেথি এই বিষয়গুলোর পূরণে সহায়ক হতে পারে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত মেথি গ্রহণ করলে মাতৃ দুধ উৎপাদনে প্রায় ২৫‑৫০ শতাংশ বাড়তে পারে (গবেষণার পরিস্থিতি ও ব্যবহারের মাত্রার ওপর নির্ভর করে)। তাই শুধু বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি নিয়েই নয়, মৌলিক পুষ্টি ও সঠিক জীবনধারার সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হলে ফলাফল সবচেয়ে ভালো পাওয়া যায়।
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি কীভাবে খাওয়া যেতে পারে?
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি খাওয়ার অনেক পদ্ধতি আছে। প্রথম পদ্ধতি হলো মেথি চা বানিয়ে পান করা। গ্রাম বা শহরের বাজারে পাওয়া মেথির বীজ কয়েকটি মুঠো নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে, একটু ভেজা করার পর সেদ্ধ পানি দিয়ে সিদ্ধ করা যেতে পারে। এক গ্লাস গরম পানি এবং অল্পেকিছু মেথি বীজের মিশ্রণ দিয়ে ৫‑১০ মিনিট রাখলে ঘ্রাণ ও রং ছেড়ে একটি মৃদু চা তৈরি হয়।
এভাবে এক‑দুই বার দিনে খাওয়া যেতে পারে, বিশেষ করে সকালে খালি পেটে এবং রাতে খাওয়ানোর পরে। দ্বিতীয় পদ্ধতি হলো মেথির গুঁড়া ব্যবহার করা; বীজ গুঁড়ো করে তা দুধ বাড়ানোর প্যাকেটের সঙ্গে (যেমন দোকানে পাওয়া ল্যাকটেশন পিল অথবা নিরামিষ দুধপানীয়) মেশিয়ে খেতে পারে। এক চামচ মেথির গুঁড়া এবং এক চামচ অন্য প্রোটিনারি উপাদানের সঙ্গে মেশানো একটি ভালো খাদ্য হতে পারে।
তৃতীয় পদ্ধতি হলো মেথির পাতা; কিছু অঞ্চলে মেথির পাতা সেদ্ধ করে খাবার হিসেবে ব্যবহার করা হয়, অথবা সবজি হিসেবে রান্নায় মেশানো হয়। পাতা তাজা হলে পুষ্টি বেশি থাকে। এই সকল পদ্ধতির ব্যবহারে বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি সঠিকভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে। তবে সপ্তাহে শুরুতে কম মাপ থেকে শুরু করা ভাল, যেমন এক চা‑চামচ বীজ বা এক কাপ চা, এবং পরে ধীরে ধীরে বাড়িয়ে নেওয়া যেতে পারে যদি কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া না থাকে।
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি খাওয়ার সময়, পরিমাণ ও সময়সূচী
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি খাওয়ার ক্ষেত্রে সঠিক সময় ও পরিমাণ নির্ধারণ করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাওয়া যায়। সাধারণভাবে, বিকেলে এবং রাতের সময় খাওয়া ভালো, কারণ দুধ উৎপাদন রাতে সক্রিয় হয়। সাধারণ সুপারিশ হলো প্রতিদিন ৫‑১৫ গ্রাম মেথি বীজ অথবা ১ থেকে ২ চা‑চামচ মেথির গুঁড়া গ্রহণ করা। যদি চা বানানো হয়, তাহলে এক গ্লাসের মধ্যে ১ চা‑চামচ বীজ বড় আকারের হলে আধা চা‑চামচ যথেষ্ট হতে পারে।
আরো পড়ুনঃ রসুন কিভাবে খেলে বুকের দুধ বাড়ে বিস্তারিত জানুন
সকালে খালি পেটে একটি মেথি চা এবং বিকেলে বা রাতে খাওয়ানোর আগে অথবা পরে আরেকটি চা ব্যবহার করলে দুধের উৎপাদন প্রভূতভাবে বাড়তে পারে। তবে প্রথম কয়েকদিনে দুধ বাড়তে শুরু নাও করতে পারে, কারণ দেহে হরমোনের ভারসাম্য ও অভ্যস্ততার সময় লাগে। প্রায় এক‑দুই সপ্তাহ নিয়মিত ব্যবহার করলে সাধারণত ফল পাওয়া যায়। মেয়েদের জন্য যারা গর্ভাবস্থায় আছেন বা যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
যদি মেথির গন্ধ, স্বাদ অথবা গ্যাস, অ্যালার্জি, ত্বকের ধর্ষণ বা অন্য কোনো অস্বস্তি দেখা দেয়, তখন ব্যবহারে বিরতি দেওয়া উচিত। বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি ব্যবহারের সময় পর্যাপ্ত পানি পান করা ও বিশ্রাম নিশ্চিত করা খুব গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দুধ উৎপাদন শুধু খাদ্যের উপর নির্ভর করে না, শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও নির্ভর করে।
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি খাওয়ার অন্যান্য উপাদান ও সমন্বয়
মেথি গ্রহণের পাশাপাশি কিছু খাবার ও জীবনধারা পরিবর্তন করলে বুকের দুধ বৃদ্ধিতে সহায়তা হয়। প্রথমে দেখতে হবে প্রচুর প্রোটিন জাতীয় খাবার। যেমন মাছ, ডিম, মাংস, দুধ, ছোলা, মটর, বাদাম ইত্যাদিতে প্রোটিন ভালো থাকে, যা দুধ তৈরিতে অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, শাকসবজি ও ফলমূল যাতে প্রচুর থাকে; বিশেষ করে ক্যালসিয়াম ও আয়রন‑সমৃদ্ধ সবজি। তৃতীয়ত, ভিটামিন ‑ বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি ও ওমেগা‑৩ ফ্যাটি অ্যাসিড** প্রয়োজন।
এগুলো উৎস হতে পারে মাছ, বাদাম, শস্য, দুধ, দই। চতুর্থত, প্রচুর পানি পান করতে হবে যাতে দেহ হাইড্রেটেড থাকে; কম পানিতে দুধ উৎপাদন কমে যেতে পারে। পঞ্চমত, বিরতি‑বিরতি বিশ্রাম, মানসিক চাপ কমিয়ে আনা ও পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করা দরকার। এছাড়া মাতৃ‑বয়স, গর্ভাবস্থা বা শ্বাসনালার অবস্থা, হরমোনজনিত পরিবর্তন ইত্যাদি বিষয়গুলি ভুলে যাবেন না।
এসব যদি মেথির সঙ্গে মিলিয়ে নেওয়া হয়, তাহলে বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি অনেক বেশি কার্যকর হবে। কিছু পরিবারে লোকভার relied home remedies থেকেও লাভ হয়; যেমন দুধ, গরম দুধের সাথে মেথি মিশিয়ে খাওয়া, অথবা পাতলা দুধ‑চিনির মিশ্রণে মেথি গুঁড়া দিয়ে দেওয়া ইত্যাদি। তবে ডাক্তারের পরামর্শ নিলে সবসময় ভালো হয়, বিশেষ করে যাঁদের গর্ভাবস্থা, যাঁরা রোগে আছেন বা ওষুধ নিচ্ছেন।
সতর্কতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি ব্যবহারে কিছু সতর্কতা অনুসরণ করলে নিরাপদ ও সুফল পাওয়া যায়। প্রথমত, যাঁদের ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, অথবা হরমোন সংক্রান্ত কোনো রোগ রয়েছে, তাঁদের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে কারণ মেথি রক্তে শর্করার মাত্রা প্রভাব ফেলতে পারে। দ্বিতীয়ত, যাঁরা গর্ভে আছেন, তাদের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক হওয়া উচিত; যদিও কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মেথি সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত ব্যবহারে গর্ভাবস্থাকে প্রভাবিত করতে পারে।
তৃতীয়ত, যদি মেথি খাওয়ার পরে মুখে জ্বালা, গলার গন্ধ, দাঁতে গন্ধ, খুসখুসি, বা পেটে ব্যথা হয়, তখন ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। চতুর্থত, শিশুরে দুধ পাবে এমন সময় মা যে অন্ন গ্রহণ করবেন, সেটা পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যকর হতে হবে যাতে শিশুর পেট ভালো থাকে। পঞ্চমত, মেথি লাইমেনেস বা হর্নমোট জনিত পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারে, তাই সংবেদনশীল ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সাবধান থাকতে হবে। এগুলো মিলিয়ে বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি ব্যবহারে ফল পেতে পারা যায়, তবে অতিরিক্ত উচ্চমাত্রায় খাওয়ার আগে সবসময় ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের পরামর্শ গ্রহণ করা ভালো।
গবেষণা ও বৈজ্ঞানিক প্রমাণ
বিভিন্ন দেশে ও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে মেথি কার্যকরভাবে দুধ উৎপাদন বাড়াতে পারে। একটি ছোট‑গবেষণায় দেখা গেছে যে নিয়মিত মেথি বীজ খাওয়া মায়েদের দুধ উৎপাদন প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে সক্ষম। অন্য একটি গবেষণায় চা হিসেবে মেথি খাওয়ার পর ৭ দিনের মধ্যে দুধের পরিমাণে উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি দেখা গেছে।
তবে গবেষণাগুলি সাধারণত ছোট নমুনা নিয়ে, তাই ফলাফল সব ক্ষেত্রে একরকম নয়। পশ্চিম ও দক্ষিণ এশিয়ায় লোকচলায় প্রাচীনকাল থেকেই “বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি” একটি বিশ্বাসযোগ্য ঘরোয়া উপায়। বর্তমান দিনে আধুনিক পুষ্টিবিজ্ঞান ও গবেষণায় মেথির কার্যকারিতা অধিকতর স্পষ্ট হচ্ছে।
কিছু গবেষণায় দেখা গেছে মেথি ছাড়া শুধু সার্বিক জীবনধারা পরিবর্তন করলে দুধ উৎপাদন বাড়ে, তবে মেথির সংযোজন সেসব পরিবর্তনগুলোর সঙ্গে মিলিয়ে দিলে উন্নতি বেশি হয়। তাই আপনার পরিকল্পনায় মেথিকে গুরুত্ব দেবেন তবে গোটা বিষয়টি একটি সামগ্রিক পন্থায় দেখুন, শুধু মেথিতে অভিহিত হয়ে নয়। গবেষণায় পাওয়া অভিজ্ঞতা বলছে যে মেথি সঙ্গে পর্যাপ্ত ঘুম, হাইড্রেশন, বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাদ্য থাকলে বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি সবচেয়ে বেশি সহায়ক।
প্রবন্ধের সারাংশ ও কার্যকর দিকনির্দেশনা
সারাংশভাবে বলা যায়, বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি একটি সহজ, নিরাপদ এবং আপাতদৃষ্টিতে কার্যকর উপায় হতে পারে যদি সঠিকভাবে ব্যবহৃত হয়। আপনার নিয়মিত খাদ্যাভ্যাসে অন্তর্ভুক্ত করুন মেথি; প্রথমে কম পরিমাণে, তারপর ধীরে ধীরে বাড়িয়ে নিন। মেথি চা, গুঁড়া অথবা পাতা— যেকোনোভাবে খাওয়া যেতে পারে,
তবে এখনও সবচেয়ে ভালো হয় প্রাকৃতিক ও বিশুদ্ধ উপাদান ব্যবহার করা। জীবনের অন্যান্য দিক যেমন ভালো ঘুম, চাপমুক্ত মন, পর্যাপ্ত পানি, এবং পুষ্টিকর খাবার সুচারুভাবে বজায় রাখুন। যেকোন ঘরোয়া সমস্যা বা শারীরিক কোনো পরিবর্তন দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তার বা পুষ্টিবিদের সঙ্গে পরামর্শ করুন। বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি যদি সঠিকভাবে ও সংযোজিতভাবে ব্যবহার করা হয়, তবে এর লাভ বৃদ্ধির সম্ভাবনা প্রখর। আপনার দুধ উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে থাকুক, মা ও শিশুর স্বাস্থ্য ভাল থাকুক—এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সফল হোন শরীর ও মন দুই‑ই সুস্থ রেখে এই যাত্রায়।
মেথির বীজ প্রস্তুতি এবং সেবন পদ্ধতি
মেথির বীজ প্রস্তুতি এবং সেবন পদ্ধতি জানা থাকলে এর সর্বোত্তম উপকারিতা পাওয়া যায়। মেথির বীজ বিভিন্ন উপায়ে প্রস্তুত করে সেবন করা যেতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ পদ্ধতি হলো মেথির বীজ রাত্রে পানিতে ভিজিয়ে রাখা। এজন্য ১-২ চা চামচ মেথির বীজ নিয়ে একটি কাপে রেখে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি দিয়ে রাত্রে ভিজিয়ে রাখতে হবে। সকালে উঠে খালি পেটে এই ভেজানো মেথির বীজ চিবিয়ে খেতে হবে এবং যে পানিতে মেথি ভেজানো হয়েছে সেই পানিও পান করতে হবে।
এই পদ্ধতিটি স্তন্যপ্রবাহ বাড়াতে খুবই কার্যকরী। আরেকটি পদ্ধতি হলো মেথির বীজ গুঁড়ো করে নেওয়া। এজন্য শুকনো মেথির বীজ একটি মিক্সার গ্রাইন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এই গুঁড়ো একটি বায়ুরোধক পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। এই গুঁড়ো দিনে ২-৩ বার খেতে পারেন। প্রতিবার ১ চা চামচ মেথির গুঁড়ো নিয়ে তাতে সামান্য গরম পানি বা দুধ মিশিয়ে পান করতে পারেন। মেথির গুঁড়ো মধু বা গুড়ের সাথে মিশিয়েও খেতে পারেন।
মেথির বীজ দিয়ে চা বানিয়েও খেতে পারেন। এজন্য ১ চা চামচ মেথির বীজ নিয়ে তাতে ১ কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে গেলে চা ছেঁকে নিতে হবে এবং এতে সামান্য মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। এই চা দিনে ২-৩ বার খেতে পারেন। মেথির বীজ রান্নায়ও ব্যবহার করা যেতে পারে। বিভিন্ন তরকারি, ডাল বা অন্যান্য খাবারে মেথির বীজ যোগ করে রান্না করা যেতে পারে। মেথির বীজ তেলে ভেজে গুঁড়ো করে বিভিন্ন খাবারে ব্যবহার করা যেতে পারে। মেথির বীজ দিয়ে আচারও তৈরি করা যেতে পারে।
মেথির বীজ দিয়ে লাড্ডু বা অন্যান্য মিষ্টি তৈরি করে খেতে পারেন। মেথির বীজ দিয়ে তৈরি খাবারগুলো নিয়মিত সেবন করলে স্তন্যপ্রবাহ বাড়তে সাহায্য করে। মেথির বীজ সেবনের সময় কিছু বিষয় মনে রাখতে হবে। প্রথমত, মেথির বীজ সেবনের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। অতিরিক্ত মেথি সেবন করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। দ্বিতীয়ত, মেথির বীজ সেবনের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। তৃতীয়ত,
মেথির বীজ সেবনের সময় স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করতে হবে। চতুর্থত, মেথির বীজ সেবনের ফলাফল তাৎক্ষণিকভাবে নাও দেখা যেতে পারে, তাই ধৈর্য ধরতে হবে। পঞ্চমত, কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিলে অবিলম্বে ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তাই মেথির বীজ প্রস্তুতি এবং সেবন পদ্ধতি সঠিকভাবে অনুসরণ করলে এর সর্বোত্তম উপকারিতা পাওয়া যায় এবং স্তন্যপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে।
স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য মেথির রেসিপি
স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য মেথি দিয়ে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর রেসিপি তৈরি করা যেতে পারে যা স্তন্যপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। এই রেসিপিগুলো সহজেই বাড়িতে তৈরি করা যায় এবং নিয়মিত সেবন করলে স্তন্যপ্রবাহ বাড়াতে সাহায্য করে। একটি জনপ্রিয় রেসিপি হলো মেথির লাড্ডু। এটি তৈরি করতে প্রথমে ১ কাপ মেথির বীজ নিয়ে তা ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে।
এরপর মেথির বীজ একটি প্যানে নিয়ে শুকনো ভেজে নিতে হবে যতক্ষণ না এটি সুগন্ধযুক্ত হয়। ভাজা মেথির বীজ ঠান্ডা হয়ে গেলে একটি মিক্সার গ্রাইন্ডারে দিয়ে ভালোভাবে গুঁড়ো করে নিতে হবে। এরপর ১ কাপ গুড়, ১/২ কাপ ঘি, ১/২ কাপ নারকেল কুচি, ১/৪ কাপ কাজু বাদাম কুচি, ১/৪ কাপ কিশমিশ এবং ১/২ চা চামচ এলাচ গুঁড়ো নিতে হবে। একটি প্যানে ঘি গরম করে তাতে গুড় দিয়ে গলিয়ে নিতে হবে। গুড় গলে গেলে তাতে মেথির গুঁড়ো, নারকেল কুচি, কাজু বাদাম কুচি, কিশমিশ এবং এলাচ গুঁড়ো দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে।
মিশ্রণটি ঠান্ডা হয়ে গেলে ছোট ছোট লাড্ডু তৈরি করে নিতে হবে। এই লাড্ডু দিনে ১-২টি খেতে পারেন। আরেকটি জনপ্রিয় রেসিপি হলো মেথির শাক। এটি তৈরি করতে প্রথমে ২ আঁটি মেথির পাতা নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর মেথির পাতা ছোট ছোট করে কেটে নিতে হবে। একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে ১ চা চামচ পেঁয়াজ কুচি, ১ চা চামচ রসুন কুচি, ১ চা চামচ আদা কুচি এবং ২টি সবুজ মরিচ কুচি দিয়ে ভাজতে হবে। পেঁয়াজ, রসুন, আদা এবং মরিচ নরম হয়ে গেলে তাতে কেটে রাখা মেথির পাতা দিয়ে ভালোভাবে নেড়েচেড়ে ভাজতে হবে।
মেথির পাতা নরম হয়ে গেলে তাতে স্বাদ অনুযায়ী লবণ এবং হলুদ গুঁড়ো দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। এরপর ঢাকনা দিয়ে ৫-৭ মিনিট রান্না করতে হবে। মেথির শাক ভাত, রুটি বা পরোটার সাথে পরিবেশন করা যেতে পারে। আরেকটি জনপ্রিয় রেসিপি হলো মেথির চা। এটি তৈরি করতে প্রথমে ১ চা চামচ মেথির বীজ নিয়ে তাতে ১ কাপ পানি দিয়ে জ্বাল দিতে হবে। পানি ফুটে অর্ধেক হয়ে গেলে চা ছেঁকে নিতে হবে এবং এতে সামান্য মধু বা লেবুর রস মিশিয়ে পান করতে হবে। এই চা দিনে ২-৩ বার খেতে পারেন। আরেকটি জনপ্রিয় রেসিপি হলো মেথির ডাল।
এটি তৈরি করতে প্রথমে ১ কাপ মসুর ডাল নিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। এরপর ডাল একটি পাত্রে নিয়ে তাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি, ১ চা চামচ মেথির বীজ, স্বাদ অনুযায়ী লবণ এবং হলুদ গুঁড়ো দিয়ে রান্না করতে হবে। ডাল সেদ্ধ হয়ে গেলে একটি ছাঁকনিতে ছেঁকে নিতে হবে। এরপর একটি কড়াইয়ে তেল গরম করে তাতে ১ চা চামচ জিরা, ১ চা চামচ সরিষা, ২টি শুকনো মরিচ এবং কয়েকটি কারি পাতা দিয়ে ফোড়ন দিতে হবে।
ফোড়ন থেকে সুগন্ধ বের হলে তাতে সেদ্ধ ডাল ঢেলে দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিতে হবে। মেথির ডাল ভাতের সাথে পরিবেশন করা যেতে পারে। এই রেসিপিগুলো নিয়মিত সেবন করলে স্তন্যপ্রবাহ বাড়তে সাহায্য করে এবং মায়ের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়। তাই স্তন্যদানকারী মায়েদের জন্য মেথি দিয়ে তৈরি এই রেসিপিগুলো খুবই উপকারী।
উপসংহার
বুকের দুধ বৃদ্ধির জন্য মেথি একটি প্রাকৃতিক, তুলনামূলকভাবে সস্তা এবং সহজলভ্য উপায়। উপকারী হরমোন উৎসাহ, খাদ্য উপাদান, রক্ত সঞ্চালন উন্নতি, ও হজম শক্তি বাড়ানো — সব মিলিয়ে মেথি কার্যকর হতে পারে। তবে সঠিক পরিমাপ ও সময়, স্বাস্থ্যকর অভ্যাস, পর্যাপ্ত বিশ্রাম ও পুষ্টিকর খাবার সব মিলিয়ে হওয়া উচিত। যদি আপনি নিয়মিত ও ধৈর্য সহকারে মেথি ব্যবহার করেন এবং আপনার জীবনধারা যতটা সম্ভব স্বাস্থ্যকর আর সমন্বিত রাখেন, তবে বুকের দুধ বৃদ্ধিতে আপনি উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন দেখতে পাবেন।

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url